মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও রাজনীতিকদের অবৈধভাবে আটকের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে গতকাল সোমবার তলব করে যুক্তরাজ্য।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরে তলব করা হয়। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, লন্ডনে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিউ জাওয়ার মিনকে পররাষ্ট্র দপ্তরে তলব করা হয়। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের এশিয়াবিষয়ক মন্ত্রী নাইজেল অ্যাডামস মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছেন। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিসহ দেশটির বেসামরিক নেতাদের অবৈধভাবে আটকেরও নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারে আটক বেসামরিক নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি তাঁদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে আহ্বান জানিয়েছেন নাইজেল।
এ ছাড়া মিয়ানমারের নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন শান্তিপূর্ণভাবে পুনরায় ডাকার আহ্বানও জানিয়েছেন নাইজেল।
লন্ডনে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলবের আগে গতকাল যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে টুইট করেন।
টুইটে জনসন বলেন, ‘মিয়ানমারে সু চিসহ বেসামরিক নেতাদের আটক ও সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় আমি নিন্দা জ্ঞাপন করছি। সাধারণ মানুষের ভোটাধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে। বেসামরিক নেতাদের ছেড়ে দিতে হবে।’
জনগণের ভোটে নির্বাচিত সু চির সরকার উৎখাতের পর মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সব ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সামরিক বাহিনী দেশটিতে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করে।
মিয়ানমারে রাজনীতিকদের আটক ও সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা-সংগঠনও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্বে যেখানেই গণতন্ত্র আক্রমণের শিকার হবে, সেখানেই তার (গণতন্ত্র) পক্ষে দাঁড়াবে যুক্তরাষ্ট্র। সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত জরুরি ভিত্তিতে পর্যালোচনা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
মিয়ানমারে গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি ফের বড় জয় পায়। নির্বাচনে সু চির দল ৮৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩৯৬টি আসন পায়। আর পার্লামেন্টের ৪৭৬টি আসনের মধ্যে সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি পায় মাত্র ৩৩টি আসন। এই নির্বাচনের ফল ঘিরে সংকট ঘনীভূত হয়। সেনাবাহিনী ও ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি নির্বাচনের পর থেকেই ভোটে কারচুপির অভিযোগ তোলে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার দেশটির নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ নাকচ করে। গতকাল মিয়ানমারের নবনির্বাচিত পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। তার কয়েক ঘণ্টা আগে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে।
১৫ বছর গৃহবন্দী থাকার পর ২০১০ সালে মুক্ত হয়েছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি। ২০১৫ সালে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচন ছিল মিয়ানমারে ২৫ বছরের মধ্যে প্রথম অবাধ ভোট। এতে সু চির এনএলডি বিপুল জয় পেয়ে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু সেনাবাহিনীর রচিত সংবিধান তাঁর দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। শেষে স্টেট কাউন্সেলরের পদ সৃষ্টি করে সেই পদে আসীন হন সু চি।
প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে সামরিক শাসন চলা মিয়ানমার ২০১৫ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের সুবাস পেতে শুরু করে। গত নভেম্বরের নির্বাচনে সেটা কিছুটা ভিত্তি পায়। কিন্তু গতকাল আবার সামরিক জান্তার দখলে চলে গেল দেশটি।