প্রতিনিধি,মাদারীপুর-‘এখানে যাঁরা নৌকার বিরুদ্ধে (ভোট) করেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ রেখে গেলাম, আগামী দুই–এক দিনের ভেতর যদি আপনারা পরিবর্তন হয়ে নৌকা মার্কায় নির্বাচন করেন দেশের স্বার্থে, ভালোভাবে থাকতে পারবেন। আর নচেত ঘরে ঘুমানোর কোনো সুযোগ নেই।’
মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে আয়োজিত এক উঠান বৈঠকে এমন বক্তব্য দিয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বেলাল হোসেন সরদার। তাঁর ওই বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয় পড়েছে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কালকিনি পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কালকিনি পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পাঙ্গাসিয়া এলাকায় ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেনের ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘যাঁরা অবিভাবক আছেন, তাঁদের অনুরোধ করে বলি, পায়ে হাত দিয়ে বলি, এই নৌকা মার্কার ঐতিহ্য রক্ষার্থে, শেখ হাসিনার ঐতিহ্য রক্ষার্থে, আমাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে হবে।’
একই সভার ২৭ সেকেন্ডের আরও একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ ভোটারদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা জানেন কোনো এমপি এলাকায় যাইতে পারেন না নির্বাচনের সময়। আমার এমপি, আমাদের এমপি, আপনাদের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবহান গোলাপ ভাই আগামীকাল কালকিনিতে আসবেন। প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিয়েছেন এবং তিনি এই নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে নিজে পরিচালনা করবেন। আমরা, আপনারা সবাই তাঁকে সহযোগিতা করব।’
বক্তব্যের বিষয়ে বেলাল হোসেন সরদার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটারদের আমি হুমকি দিইনি। আমি বলেছি অন্যদের ভোট দিলে উন্নয়ন হবে না। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আমি এ কথা বলেছি।’
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে উঠান বৈঠকে বক্তব্য দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ। বৃহস্পতিবার বিকেলে কালকিনি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে,ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
আর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক কারণে এমন বক্তব্য দিতে পারি। আমি সমর্থক, কোনো প্রার্থী তো নই। এমন কথা কোনো দোষের নয় বলে আমি মনে করি। তা ছাড়া কিছু বক্তব্য এমন দিলে নৌকায় ভোট আসে।’
দুই নেতার এই বক্তব্যে ভোটার, বিএনপি ও স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থীরা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন ভোটার বলেন, নৌকা প্রার্থীর পক্ষে এভাবে যদি বক্তব্য দেওয়া হয়, তাহলে কতটুকু সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তা নিয়ে তাঁরা শঙ্কিত। তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভোট দিতে যেতে পারবেন না। সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেলে কেন্দ্রে যাবেন।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সোহেল রানা বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী ও সমর্থকেরা এভাবেই হুমকি–ধমকি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন, যা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে বলে আমি মনে করি। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও নির্বাচনী এলাকায় নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের কোনো ভূমিকা আমার চোখে পড়ছে না। বিষয়টিতে তাঁরা বিশেষ নজর দিলে এমন হুমকিমূলক বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ তাঁরা পেতেন না।’
জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থী এস এম হানিফ বলেন, ‘সমর্থকেরা কে কী বললেন বা কে কী করলেন, তা দেখার কাজ তো আমার নয়। তা ছাড়া ভাইরাল হওয়া ভিডিও আমি দেখিনি। এ বিষয়ে আমার কিছুই জানাও নেই।’
This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.
Strictly Necessary Cookies
Strictly Necessary Cookie should be enabled at all times so that we can save your preferences for cookie settings.
If you disable this cookie, we will not be able to save your preferences. This means that every time you visit this website you will need to enable or disable cookies again.