বিশেষ প্রতিবেদক ।ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য অপরাধ করোনা। কোনো ক্ষমতাই চিরস্থায়ী নয়। মাবিয়া রাঃ এর ছেলে ইয়াজিদ তার প্রমাণ। এটাই মহররম মাসের শিক্ষা। এভাবেই জুম্মা দিনের বয়ান শেষ করেন বরিশালের দক্ষিণ আলেকান্দার সিকদার পাড়া বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদের ঈমাম হাফেজ মাওলানা আমিনুল ইসলাম।
৫ জুলাই শুক্রবার খুতবার শুরুতে ঈমাম বলেন, এটা মহররম মাস। মহররম মানে হচ্ছে সম্মানিত। এই মাসের অনেক ফজিলত রয়েছে। মহররম মাসের প্রথম দশদিন পৃথিবীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার জন্ম হয়েছে। তেমনি আসমানেও ঘটেছে অনেক ঘটনা। আল্লাহর কাছে চারটি মাস খুব সম্মানের। তার একটি হচ্ছে মহররম মাস। সয়ং আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয় আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সঙ্গে তোমরা যুদ্ধ করো সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৩৬)।
অন্য তিনটি মাস হচ্ছে জিলকদ, জিলহজ ও রজব। এই মাসগুলোতে যাবতীয় যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রক্তপাতকে মহান আল্লাহ হারাম ঘোষণা করেছেন।
মহররম হচ্ছে হিজরি বছরের প্রথম মাস। যা হজরত ওসমান রাঃ প্রস্তাবনায় হিজরি বছরের প্রথম মাস হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়। সম্মানিত চার নিষিদ্ধ মাস সম্পর্কে হাদিসে সুস্পষ্ট বর্ণনা এসেছে-হজরত আবু বকর রাঃ বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিনটি হলো ধারাবাহিক মাস- জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। আর একটি হলো রজব মাস। জমাদিউস সানি ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস অর্থাৎ রমজানের আগের মাসের আগের মাস।’ (বুখারি) আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এ চারটি মাসকে সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ তাআলার কাছে যে মাসগুলো সম্মানিত, সে মাসগুলোকে সম্মান দেখানো ও মর্যাদা দেওয়া মুমিনের প্রথম কাজ। আল্লাহর দেওয়া সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে মহররমসহ সম্মানিত ৪ মাসের দুনিয়ার যাবতীয় পাপাচার থেকে মুক্ত থাকা মুমিন মুসলমানের দ্বিতীয় কাজ। তবেই জীবনের বাকি সময়গুলো এ মাসের অনুসরণ ও অনুকরণে গুনাহমক্ত থাকা সহজ হবে। এ মাসগুলোর করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘এ (মাসের) মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি কোনোরূপ অত্যাচার করো না।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৩৬)
আয়াতের ব্যাখ্যা তাফসির বিশারদগণ বলেছেন, অত্যাচার বলতে এখানে যে কোনো ধরণের পাপাচার করাকে বুঝানো হয়েছে। তাই এ মাসের পাপাচার না করাই কোরআনে নির্দেশিত সেরা অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আমল।
এমনিতে অন্যান্য মাসে গোনাহের কাজ করা মুমিন মুসলমানের জন্য জঘন্য কাজ। আর সম্মানিত চার মাস জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব মাসের পাপাচার করা দ্বিগুণ মারাত্মক অন্যায় ও সরাসরি মহান আল্লাহর নির্দেশের লঙ্ঘন।
সওয়াবের প্রতিযোগিতার মাস
সওয়াব ও ভালো কাজের প্রতিযোগিতা করা এ মাসের তৃতীয় কাজ। ইসলামিক স্কলারদের মতে, সম্মানিত ৪ মাসের মধ্যে মহররম মাসই শ্রেষ্ঠ। তাই এ মহররম মাসে গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি যেসব কাজে সওয়াব ও উপকারিতা রয়েছ, সেসব কাজের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দেওয়া খুবই জরুরি। আবার মর্যাদার বিচারে রমজানের পরেই এ মহররম মাসের স্থান। কেননা মহররম শব্দের অর্থই হলো- সম্মানিত।
মহররমকে সম্মান ও মর্যাদা দেখানোর অন্যতম কারণ
মাসটির নাম হলো ’মহররম’। এর অর্থ : সম্মানিত। হাদিসেও এ মাসটিকে আল্লাহর মাস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এটি (মহররম) শাহরুল্লাহ তথা আল্লাহর মাস।’ (মুসলিম)
এই মাসের দশ তারিখ অনেক মুসলমান আশুরা হিসেবে পালন করেন উল্লেখ করে ঈমাম আমিনুল ইসলাম বলেন, ইয়াজিদের কাহিনী তুলে ধরেন। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে রাজতান্ত্রিক উমাইয়া খিলাফতের দ্বিতীয় খলিফা ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার পাঠানো সেনাবাহিনীর হাতে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাতি হজরত হুসাইনের (রা.) শাহাদতবরণ করার সময় থেকে ওই দিনটি তার শাহাদতবার্ষিকী হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। এর পর মাত্র তিন বছর বেঁচে ছিলেন ইয়াজিদ। তার বংশের আর কেউ কখনোই ক্ষমতায় আসেনি। তার মৃত্যু নিয়েও রয়েছে বহুবিধ মতামত। তাই ক্ষমতা কখনোই চিরস্থায়ী নয়। ক্ষমতার লোভে বা দম্বে আল্লাহর দুষমনি ক্রয় করে শুধুই অবিশ্বাসী কাফের মুশরিকরা।
This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.
Strictly Necessary Cookies
Strictly Necessary Cookie should be enabled at all times so that we can save your preferences for cookie settings.
If you disable this cookie, we will not be able to save your preferences. This means that every time you visit this website you will need to enable or disable cookies again.