জামুকা যেসব অপরাধের জন্য জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সংবিধান লঙ্ঘন, সংবিধানের মূলনীতি বাতিল, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের মদদ দেওয়া ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা, বিভিন্ন সময় আত্মস্বীকৃত খুনিদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ, আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততামূলক বক্তব্য উল্লেখ থাকা, তাঁদের দেশত্যাগে সহায়তা ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন এবং মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতাবিরোধী লোকজন নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেয়।
জামুকার তিন সদস্যের কমিটি জিয়াউর রহমান ছাড়াও ’৭৫–এর পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা খুনি খন্দকার মোশতাক আহমদ, মাহবুবুল আলম চাষীসহ অন্যদের এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদের (মুক্তিযোদ্ধা) বিষয়ে তথ্য–প্রমাণ উপস্থাপন করবে। তবে কত দিনের মধ্যে কমিটি এসব কাজ করবে, তা সুনির্দিষ্ট করা হয়নি।
কমিটির প্রধান সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ও সদস্য শাহজাহান খান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও শাজাহান খান। কমিটির আরেক সদস্য সাবেক সচিব রশিদুল আলম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফের ভাই।
কমিটির কাজের বিষয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সিদ্ধান্ত তো হয়েই আছে, এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা।’ জিয়াউর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা সনদও বাতিল হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুধু খেতাবটাই আপাতত বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা থাকবেন।’
এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি জামুকার সভায় জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘বীর উত্তম’ বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরীফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করা হয়। ওই সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের আত্মস্বীকৃত খুনিদের পদক বা খেতাব বাতিলের আলোচনাকালে একপর্যায়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান, বীর উত্তমের খেতাব বাতিলের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ওই সভায় বীর উত্তম খেতাব বাতিলযোগ্য বলে সবাই একমত পোষণ করেন।
স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব হঠাৎ করে বাতিলের সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক ও উদ্দেশ্যমূলক বলছে বিএনপি। জামুকার এখতিয়ার নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। বিএনপি নেতারা মনে করেন, জামুকা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের ইস্যুটি সামনে এনেছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জামুকার দায়িত্ব প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা এবং রাষ্ট্র তাদের যে সুযোগ-সুবিধা দেয়, তা পাওয়ার ব্যবস্থা করা। সেনাবাহিনীর কোনো কর্মকর্তার খেতাব বাতিল করা তাদের কাজ নয়। তারা সেটি করতেও পারে না।
খেতাব বাতিলসংক্রান্ত জামুকা গঠিত কমিটির সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা রশিদুল আলম বলেন, ‘আমি কোনো কমিটিতে থাকব না। আমাকে কার্যবিবরণীও পাঠানো হয়নি।’ তিনি বলেন, জামুকার ৭২তম সভায় জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বেশি আলোচনা হয়নি। আলোচনায় তিনি বলেছেন বিষয়টি জটিল হবে।