নিজস্ব প্রতিবেদক-বাংলাদেশে আল–জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দিয়েছেন পাঁচ অ্যামিকাস কিউরি। তাঁরা গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে এ মত দেন।
কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল–জাজিরায় ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র প্রচার করা হয়। সেটি বিভ্রান্তিকর, বিদ্বেষমূলক ও মানহানিকর উল্লেখ করে দেশে আল–জাজিরার সম্প্রচার ও ওয়েবসাইট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এনামুল কবির ইমন ৮ ফেব্রুয়ারি ওই রিট করেন। এতে বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়।
১০ ফেব্রুয়ারি আদালত রিটের গ্রহণযোগ্যতাসহ কয়েকটি বিষয়ে মতামত দিতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি ব্যাখ্যাদানকারী) হিসেবে ছয়জন আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন। গতকাল শুনানির ধার্য তারিখে মতামত তুলে ধরেন তাঁরা।
শুরুতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এ রিটের আগে আইনি নোটিশ (ডিমান্ড জাস্টিস অব নোটিশ) দেওয়া হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আল–জাজিরায় সম্প্রচারিত তথ্যচিত্রটি কীভাবে হুমকি, তা–ও উল্লেখ করা হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্লক করার বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা আছে।
কাতারভিত্তিক এ টিভি চ্যানেলটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত, যা দেশে সম্প্রচারিত হচ্ছে। ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামে ওই তথ্যচিত্রের প্রতিবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইএসপিআর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে তথ্যচিত্রটিকে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলা হয়েছে। তথ্যচিত্রটি দেশে–বিদেশে অনেক লোক দেখেছেন। রুল দেওয়া সমীচীন হবে না।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল উল আলম বলেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে সে জন্য নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ আছে, যা কর্তৃপক্ষ নিজস্ব বিবেচনায় করবে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮(৪) ধারা বলছে, এ ধারার উদ্দেশ্য পূরণে প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয় বিধি দিয়ে নির্ধারিত হবে। বিধি করা হয়নি। তাই নির্দেশনা দেওয়া হলে তা বাস্তবায়ন করা যাবে না। মৌলিক অধিকার কীভাবে লঙ্ঘন হয়েছে, সে বিষয়ে রিটে উল্লেখ নেই। রিটটি আপিল বিভাগের নীতিমালার আওতায় পড়ে না।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু বলেন, আল–জাজিরার ওই তথ্যচিত্রে দেশের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা ও সংহতিকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। দেশ ও নাগরিকদের স্বার্থ ও সুরক্ষায় বিবাদীদের এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। রিট আবেদনকারী ব্যক্তিগত ও জাতীয়ভাবে সংক্ষুব্ধ।
সংবিধান রিট আবেদনকারীকে আইনের আশ্রয়ের নিশ্চয়তা দিয়েছে। রিটকারীর মৌলিক অধিকার ও সংবিধানের মূলনীতি অনুসারে আদালত ইলেকট্রনিক ও ডিজিটাল মাধ্যম থেকে ওই তথ্যচিত্র অপসারণ করতে বিবাদীদের নির্দেশনা দিতে পারেন। এটি না করলে তারা পার পেয়ে যাবে, আরও করতে থাকবে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী বলেন, বিভিন্ন রায়ের মাধ্যমে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সংজ্ঞা বিগত কয়েক বছরে সম্প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু এই রিট আবেদনকারীর ক্ষেত্রে সেই সম্প্রসারণের কারণগুলো অনুপস্থিত বলে রিট আবেদনকারী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নন।
আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে উল্লেখ করেন অ্যামিকাস কিউরি শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, এ ধরনের রিট করার আগে ডিমান্ড জাস্টিস অব নোটিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক। যেখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচনামূলক ক্ষমতা আছে, সে ক্ষেত্রে এ ধরনের রিট (ম্যান্ডামাস) চলে না। ওই তথ্যচিত্র ব্লকের নির্দেশনা দেওয়া হলে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।
ছয় অ্যামিকাস কিউরির অভিমত শোনার পর আদালত বুধবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।